❏ নামজারি (মিউটেশন) বলতে কি বুঝি বা বুঝায় ।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় মিউটেশন (Mutation) বা নামজারি একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জমি ক্রয় বা অন্য কোন উপায়ে জমির মালিক হয়ে থাকলে হালনাগাদ রেকর্ড সংশোধন করার ক্ষেত্রে মিউটেশন (Mutation) একটি অপরিহার্য নাম। ইংরেজি মিউটেশন শব্দের বাংলা অর্থ হলো পরিবর্তন । আইনের ভাষায় এই মিউটেশন (Mutation) শব্দটির অর্থ হল নামজারি। নামজারি বা নামখারিজ বলতে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করা বুঝায়।
অর্থাৎ পুরানো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারি বা নামখারিজ বলে।
❏ জমির নামজারি/নামপত্তন কখন করতে হয়?
আইনগতভাবে, স্থাবর সম্পত্তির মালিক হইবার পরে, প্রথমত জায়গার দখল বুঝিয়া নিতে হয় এবং এর পরবর্তীতে নিজ নামে সম্পত্তির নামজারি করিয়া লইতে হয়।
জমিদার অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ অথবা রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তি স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা লাভ করার পর, পূর্ব মালিকের নামের পরিবর্তে নতুন মালিকের নাম সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা বা তার নিজ নামে নতুন খতিয়ান খোলার বা রেকর্ড হালনাগাদ করনের যে কার্যক্রম তাকে খারিজ/নামজারি/ নামপত্তন/মিউটেশন/Mutation বলে।
কোন আইন দ্বারা নামজারি/নামপত্তন কার্যক্রম পরিচালিত হয়?
নামজারি করা হয়, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর বিধান মতে ৯০, ৯১, ৯২, ৯৩ ধারার আওতায় কোন মালিকানা স্বত্ববিলোপ হলে মালিকানা সরকারের অনুকূলে পরিবর্তিত হয়, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারার বিধান মোতাবেক কালেক্টরকে নামজারির রেকর্ড সংশোধন বা নামজারির ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে সরকারি রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারটি দেখার দায়িত্বে ন্যস্ত থাকেন এজন্য ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে কালেক্টর বলা হয়। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজস্ব অফিসার পদ সৃজিত হওয়ার পর ১১/১১/১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ তারিখে স্মারক নং-৩০৫(৪২৫)-১০-১২৬/৮২ বি এল এর মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে রেকর্ড সংশোধন তথা নামজারির ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। নামজারি আদেশ মূলে সৃষ্ট সংশোধিত খতিয়ানের কপি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর মাধ্যমে বা ভূমি মালিকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার বা জরিপকালে বুঝারত/তসদিক/আপত্তি আপিল স্তরে জরিপ কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করা হলে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল, ১৯৯০-এর ৩২০ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে জরিপ কর্তৃপক্ষ সংশোধিত খতিয়ানের ভিত্তিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে থাকেন।
❏ জমির নামজারি করার প্রয়োজনীয়তা আছে কেন ?
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা অনুসারে নামজারির আবেদন মঞ্জুর করে রেকর্ড সংশোধনের যে আদেশ দেওয়া হয় তার প্রয়োজনীয়তা সমূহ নিম্নরূপ :
(ক) উক্ত আদেশের ভিত্তিতে সংশোধিত খতিয়ানের সৃষ্টি হয় যা ভূমি মালিকানার হালনাগাদ রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত;
(খ) সম্পত্তি বিক্রয় এবং হস্তান্তর এর ক্ষেত্রে নামজারি থাকা আবশ্যক;
(গ) নামজারি মূলে পৃথক হোল্ডিং খুললে খাজনা পরিশোধ করা সহজ হয়;
(ঘ) ব্যাংক ঋণ, গৃহনির্মাণ ইত্যাদি ঋণ নেওয়ার জন্য নাম জারি একান্ত আবশ্যক;
(ঙ) সরকারি খাজনা পরিশোধদের সুবিধার্থে;
(চ)পরবর্তী জরিপ কাজে সহায়তার সুবিধার্থে;
(ছ) ভূমি ব্যবস্হাপনার সঠিক তথ্যের জন্য, জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বর্তমান মালিকের নাম সরকারি রেকর্ডে সন্নিবেশিত করা অত্যাবশ্যক; এবং
(জ) নামজারির আদেশভুক্ত জমিটুকু পূর্বের জমা থেকে খারিজ (কর্তন) হয়ে আবেদনকারীর নামে নতুন হোল্ডিংয়ের সৃষ্টি করে, কোন ব্যক্তি জমি ক্রয় বা অন্য কোনভাবে জমি প্রাপ্ত হওয়ার পর, নামজারি না করা বা জরিপ না হওয়া পর্যন্ত তা পূর্ব মালিকের নামেই থেকে যায়, এতে পূর্ব মালিক ইচ্ছা করলে প্রতারণামূলকভাবে জমিটি একাধিক বিক্রয়/হস্তান্তর করার সুযোগ নিতে পারে।
নামজারির/নামপত্তনের পদ্ধতি সমূহ:
নামজারির/নামপত্তনেরমূল বিষয়টি হলো ভূমির মালিকানা বা স্বত্বের পরিবর্তন, ভূমির মালিকানা বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে পারে বিধায় বিভিন্ন ডকুমেন্টস এর ভিত্তিতে নামজারি/নামপত্তনহতে পারে যেমন:
(১) ভূমি হস্তান্তর নোটিশ (ল্যান্ড ট্রান্সাসফার/এল.টি. নোটিশ) মূলে নামজারি:
প্রচলিত আইনের বিধান অনুসারে রেজিস্ট্রেশনের পর হস্তান্তর নোটিশ সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়, উক্ত নোটিশ প্রাপ্তির পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তার অফিসে একটি নামজারি মোকদ্দমা নথি খুলে বিষয়টি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করেন, ইউনিয়ন ভূমির সহকারী কর্মকর্তা সরজমিনে তদন্তক্রমে এবং রেকর্ড যাচাই ক্রমে ১০৭৮ নং ফরমে (বাংলাদেশ ফরম) প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর সহকারি কমিশনার (ভূমি) সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ করে যথাযথ শুনানি পূবর্ক বিধি মোতাবেক রেকর্ড সংশোধনের আদেশ প্রদানের মাধ্যমে নামজারি কেসটি মন্জুর বা না-মন্জুর ক্রমে নিষ্পত্তি করেন। আবেদন মন্জুর বা না-মন্জুর এর কারণ কেস নথির আদেশনামায় বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
(২) উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি নামজারি:
কোন সম্পত্তি/হোল্ডিং এর মালিকের মৃত্যুতে তার এক বা একাধিক ওয়ারিশের বা ওয়ারিশগণের আবেদনের ভিত্তিতে অথবা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি-সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ/ওয়ারিশগণদের নামে নামজারি/নামপত্তন হতে পারে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঐরুপ আবেদন বা প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর যথাযথ শুনানি ও কাগজপত্র যাচাই শেষে নামজারির আদেশ প্রদান করেন। এক্ষেত্রে সাধারণত নতুন কোন হোল্ডিং না খুলে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন করে ফারায়েজ অনুযায়ী হিস্যা বন্টন করে উত্তরাধিকারীদের নাম পূর্বের হোল্ডিং ভূক্ত করা হয়ে থাকে।
(৩) সার্টিফিকেট মূলে নামজারি:
সার্টিফিকেট মূলে কোন স্থাবর সম্পত্তির নিলাম ক্রেতা নিজ নামে উক্ত সম্পত্তির নামজারির আবেদন করলে “নিলামের বয়নামা” ও “দখলনামার” ভিত্তিতে নামজারি করা হয়।
(৪) এল. এ. (ল্যান্ড একুইজিশন বা ভূমি অধিগ্রহণ) মোকদ্দমার ভিত্তিতে নামজারি:
ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে কোন সংস্থা ভূমির মালিকানা অর্জন করতে পারেন। ঐরুপ অর্জিত সম্পত্তির নামজারির আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এল. এ. শাখা হতে ভূমি অধিগ্রহ সংক্রান্ত তথ্য (অধিগ্রহণ মোকদ্দমা নাম্বার, অধিগ্রহণের আদেশ, ভূমির তফসীল ইত্যাদি) সংগ্রহপূর্বক উক্ত সংস্থাকে তাদের নামে হোল্ডিং খোলার জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। নোটিশের প্রেক্ষিতে বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজ উদ্যোগে নামজারির আবেদন পাওয়া গেলে, দাখিলকৃত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ক্রমে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নামে হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়ে থাকে।
(৫) আদালতের ডিক্রি মূলে নামজারি:
আদালতের ডিক্রি মূলে সরকারি খাস জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নামজারি বিধান রয়েছে।
এরূপ ডিক্রিমূলে প্রাপ্ত সরকারি খাস জমির আবেদন পাওয়া গেলে একটি নামজারির মোকদ্দমা চালু করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ মতামতের জন্য কালেক্টরের নিকট প্রেরণ করতে হয়। কালেক্টর এ রূপ প্রস্তাব প্রাপ্তির পর উক্ত ডিক্রি রদের জন্য দেওয়ানী আদালতে আপিল দায়েরের ব্যবস্হা গ্রহণ করেন। বিজ্ঞ দেওয়ানী আদালতের রায়ে সরকারি স্বার্থ রক্ষিত না হলে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আইনগত ব্যবস্হা গ্রহণের যৌক্তিকতা সহ ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করতে হয়। নামজারির কেসটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পূর্বে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।
(৬) আবেদনের ভিত্তিতে নামজারি :-
গ্রহীতা বা হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রাপ্ত সম্পত্তির মালিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তের মাধ্যমে নামজারি বা নামপত্তন-জমা খারিজ অথবা জমা একএিকরণ কিংবা নামপত্তন ও জমা-একত্রীকরনের মাধ্যমে রেকর্ড হালনাগাদ করণ বা সংশোধন হয়ে থাকে। এরুপ আবেদন প্রাপ্তির পর তা যাচাই ও এন্ট্রি করে কেস নাম্বার দিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্তের জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করেন। প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবেদনকারী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল পক্ষকে নোটিশ প্রদানপূর্বক শুনানি গ্রহণপূর্বক প্রয়োজনে সকল কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্রমে সঠিক বিবেচিত হলে নামজারির আবেদন মন্জুর ও রেকর্ড সংশোধন এর আদেশ প্রদান করেন।
নিজ অফিসে ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি কেসের নম্বর এবং রেফারেন্স দিয়ে রেকর্ড হালনাগাদ করণ নিশ্চিত করা হয়। নামজারি আবেদন মন্জুর হলে,অনুমোদিত প্রস্তাবপত্র প্রাপ্তির পর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ৫(পাঁচ) কপি সংশোধিত খতিয়ান প্রস্তুত করে প্রস্তুতকারক হিসেবে স্বীয় স্বাক্ষর প্রদান করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর স্বাক্ষর এর জন্য প্রেরণ করেন। যে আইন ও মোকদ্দমা মূলে উক্ত খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছে; তা লিপিবদ্ধ করত, সহকারী কমিশনার (ভূমি) উক্ত সংশোধিত খতিয়ান স্বাক্ষর করেন। এরুপে আবেদনের ভিত্তিতে নামজারির কার্যক্রম সমাপ্ত হয়। নামজারি বিষয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে আবেদনকারী এবং সংশ্লিষ্ট ভুমি অফিসের কর্মকর্তাগণের করণীয় বিষয়াদি সুনির্দিষ্ট করে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
❏ নামজারির আবেদন পত্রে কি কি কাগজপত্র আবশ্যক/প্রয়োজন:
(১) বাংলাদেশ ফরম নং-১০৭৮ এর আবেদন পত্র ;
(২) আবেদনকারীর পূর্ণ নামও ঠিকানা জাতীয় পরিচয় পত্র/পাসপোর্ট অনুযায়ী;
(৩) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র/পাসপোর্ট এর ফটোকপি;
(৪) রেজিস্টিকৃত হস্তান্তর দলিল যেমন: সাব-কবলা, হেবা, অছিয়তনামা (উইল) ইত্যাদি দলিলের নকল কপি/সার্টিফাইট কপি;
(৫) বায়া-দলিলের ফটোকপি/অনুলিপি (যদি থাকে);
(৬) সম্পত্তির পরচা বা খতিয়ানের ফটোকপি/অনুলিপি;
(৭) ডুপ্লিকেট কার্বনরিসিট (ডি.সি.আর.) মূল কপি ;
(৮) ভূমি-উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ;
(৯) বন্টননামা দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
(১০) কোন ওয়ারিশান, জমির নামজারি করতে চাইলে ওয়ারিশান সনদপত্র যাহা সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর দ্বারা প্রদত্ত (তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা) নামজারির আবেদন পত্রের সাথে জমা দিতে হবে;
(১১) যাহার মৃত্যুর পরে ওয়ারিশান মূলে নামজারি হবে, তাহার (ডেথ সার্টিফিকেটের কপি)মৃত্যু সনদের কপি;
(১২) সিটি কর্পোরেশন এর আওতায় মৃত ব্যক্তির দাফন সার্টিফিকেট এর ফটোকপি/অনুলিপি, যাহা সংশ্লিষ্ট কবরস্থান থেকে প্রদত্ত;
(১৩) পূর্বের মালিকের নামে নামজারি থাকলে তার ফটোকপি/অনুলিপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
(১৪) কোন রায় বা ডিক্রির বলে নামজারি করলে উক্ত ডিক্রি বা রায়ের ফটোকপি/অনুলিপি; এবং
(১৫) আবেদনকারী অথবা আবেদনকারীর প্রতিনিধির সকলের পাসপোর্ট আকারের দুই কপি ছবি।
❏ আবেদনকারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী:
(১) আবেদনের ক্রম অনুসারে আবেদন নিষ্পত্তি হবে;
(২) শুনানী গ্রহণকালে দাখিলকৃত কাগজপত্রের মূল কপি সঙ্গে আনতে হবে;
(৩) নামজারির জমাভাগ ও জমা একএিকরণ ফি বাবদ সর্বমোট ২৫০/-(দুইশত পঞ্চাশ) টাকা প্রদেয়, যাহার বিস্তারিত নিম্নরূপ
(ক) আবেদন বাবাদ কোর্ট ফি: ৫/- টাকা;
(খ) নোটিশ জারি ফি: ২/ টাকা (অনধিক ৪/চার জনের জন্য), ৪ জনের অধিক প্রতি জনের জন্য আরো ০.৫০ টাকা হিসেবে প্রদান করতে হবে;
(গ) রেকর্ড সংশোধন ফি: ২০০/- টাকা প্রদেয়; এবং
(ঘ) প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান ফি: ৪৩ (তেতাল্লিশ) টাকা
(৪) আবেদন নিষ্পত্তি করণের সময়সীমা:
মহানগরের ক্ষেত্রে ৬০(ষাট) কার্যদিবস এবং মহানগরের বাহিরে অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫(পঁয়তাল্লিশ) কার্য দিবস;
(৫) শুনানির নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন/সার্কেল ভূমি অফিসে দখল/প্রয়োজনীয় মালিকানার রেকর্ডপত্র দেখাতে হবে;
(৬) প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও যেকোন অভিযোগের জন্য কারনসমূহ সহ, কমিশনার (ভূমি) এর সহিত যোগাযোগ করতে হবে;
(৭) সরকারী স্বার্থ সম্পৃক্ত না থাকলে সর্বশেষ নামজারির ভিত্তিতেই নামজারি করা হবে। সে ক্ষেত্রে নামজারিকৃত সর্বশেষ খতিয়ান ছাড়া অন্য কোন কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে না;
(৮) ফর্মের জন্য কোন ফি প্রয়োজন হবে না। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নামজারির ফর্ম সংগ্রহ বা ডাউনলোড করে আবেদন হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে (www.minland.gov.bd); এবং
(৯) এস এম এস এর মাধ্যমে শুনানির তারিখ বা তথ্য জানতে প্রতি এস এম এস এর জন্য (২) দুই টাকা অতিরিক্ত প্রদান করতে হবে।
❏ নামজারির আবেদন কি ভাবে করতে হয়?
বর্তমানে সরকারি ভূমি ওয়েবসাইট www.land.gov.bd তে প্রবেশ করে “ই- নামজারি” মাধ্যমে প্রদর্শিত আবেদন ফর্মটি পূরণ করে সেন্ড করার পর ২০ (বিশ) টাকা কোর্ট ফি ও পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে সেই মূল আবেদন পত্রটি উপজেলা কমিশনার (ভূমি) বরাবরে জমা দিতে হবে। এই আবেদনে দিতে হবে জমির বিস্তারিত পরিচয়; খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, মৌজা ও জেলা উল্লেখ করতে হবে । আবেদনে নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি ক্রয় দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্ট থাকতে হবে। একই সঙ্গে কবলা দলিলের ফটোকপি/অনুলিপি, বায়া দলিল, পর্চা বা খতিয়ানের ফটোকপি/অনুলিপি ওয়ারিশন সার্টিফিকেট (ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কমিশনারের প্রদত্ত (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ভূ উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ, বণ্টননামা দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) দিতে হবে। এছাড়া খাস জমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে কবুলিয়ত, নিলামের কাগজ পত্র, যে অফিস প্রদান করেছে উক্ত অফিস কতৃপক্ষের অনুমতি পত্র জমা দিতে হবে (প্রযোজ্যক্ষেত্রে)। কোন রায় বা ডিক্রির কারণে মিউটেশন করতে হলে ডিক্রি বা রায়ের ফটোকপি/অনুলিপি জমা দিতে হবে।
সতর্কীকরন: সতর্ক থাকতে হবে যে মিউটেশন করতে গিয়ে কোন প্রতারকের খপ্পরে না পরেন।
❏ নামজারির আবেদন না-মন্জুর হলে করনীয় কি?
বিভিন্ন কারনে নামজারির আবেদন না-মঞ্জুর হতে পারে। তাদের মধ্যে যেনম কোন দলিল এবং নথিপত্রের ত্রুটির কারনে হতে পারে। কিন্তু, আবেদন না-মঞ্জুর হলে প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে।
মিউটেশন/নামজারি না-মঞ্জুর হলে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ধারা-১৪৮ অনুযায়ী সহকারী কমিশনারের (ভূমি) আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি আপিল বোর্ডে আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়।
(১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত আইন এর ধারা-১৪৯ অনুসারে রিভিশন করা হয়)
ক্ষমতা প্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা অর্থাৎ সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তার নিজের ইচ্ছায় নথি তলব করে সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ৩০ দিনের মধ্যে তার অধীন কর্মকর্তাদেরও অর্থাৎ সহকারী কমিশনারের (ভূমি) আদেশ সংশোধন করতে পারেন।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তিন মাসের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আবেদন সংশোধন করতে পারেন।
ভূমি আপিল বোর্ড ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে তার অধীন কর্মকর্তার অর্থাৎ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) আদেশ সংশোধন করতে পারেন।
এছাড়া রিভিউ পথও খোলা আছে, রিভিউ মানে হচ্ছে পুনর্বিবেচনা করা। (রিভিউ করা হয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর, ধরা-১৫০ অনুসারে) দলিলপত্রে কোন ভুল পর্যবেক্ষণ হয়েছে বলে মনে করলে কিংবা আবেদন বাতিল করলে রিভিউ আবেদন করতে হয়, যে কর্মকর্তা আদেশ দিয়েছেন তার বরাবরই রিভিউ করতে হবে। রিভিউ করতে হবে ৩০ দিনের মধ্যে। তবে রিভিউ আবেদন করা হলে আর আপিল করা যায় না।
উপরে উল্লেখিত পন্থায় নামজারি করতে ব্যর্থ হলে দেওয়ানী আদালতেও মামলা করা যায়। এছাড়া রিভিশন এর পথও খোলা রয়েছে।