আইনগতভাবে কোন ব্যক্তি সম্পত্তির মালিকানা কি কি উপায়ে পেতে পারে (19.01.2024)

❏ আইনগতভাবে কোন ব্যক্তি সম্পত্তির মালিকানা কি কি উপায়ে পেতে পারে?

আইনগতভাবে নিম্নলিখিত উপায়ে কোন ব্যক্তি সম্পত্তির মালিকানা পেতে পারেন

উত্তরাধিকার মূলে

কোন ব্যক্তি তাহার স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি রেখে মারা যায় এবং তাহার রেখে যাওয়া সম্পত্তি যদি তাহার বৈধ প্রতিনিধিদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়, ইহাই উত্তরাধিকার মূলে মালিকানা। আল কুরআনের সূরা নিসা এর ১১ ও ১২ নাম্বার আয়াতে বন্টনের যে নীতি আছে তার দ্বারাই মূলত উত্তরাধিকার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

সূরা নিসার আয়াত নং- ১১

“আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তান সন্ততির অংশ সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, পুরুষ দুই নারীর অংশের সমান পাবে, তবে সন্তান-সন্ততি যদি শুধু দুজন নারীর অধিক হয় তাহলে তারা রেখে যাওয়া সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ পাবে, আর কেবল একটি কন্যা থাকলে সে অর্ধেক পাবে এবং তার পিতা-মাতা উভয়ের প্রত্যেকের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ৬ ভাগের এক ভাগ পাবে যদি তার সন্তান থাকে, আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিশ মাতা পিতাই হয় সে অবস্থায় তার মাতার জন্য এক তৃতীয় অংশ, কিন্তু তার ভাই বোন থাকলে, তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ, (ওইসব বন্টন হবে) তার কৃত ওয়াসিয়ত অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমরা জানো না তোমাদের পিতা এবং সন্তানদের মধ্যে কে তোমাদের পক্ষে উপকারের দিক দিয়ে অধিকতর নিকটবর্তী, (এ বন্টন) আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাশীল।”

সূরা নিসা আয়াত নং- ১২

“তোমাদের স্ত্রীদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক তোমাদের জন্য যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে আর যদি সন্তান থাকে, তবে তোমাদের জন্য তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক চতুতাংশ, তাদেরকৃত ওয়াসিয়াত কিংবা ঋণ পরিশোধের পর এবং তারা তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির শিকি অংশ পাবে যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের সম্পত্তির আট ভাগের একভাগ- তোমাদের  ওয়াসিয়ত কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। যদি পিতা-মাতাহীন ও সন্তানহীন কোন পুরুষ বা নারীর শুধু বৈপিত্রেয় একটি ভাই বা ভগ্নি থাকে; তবে প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের একভাগ, যদি তারা তার চেয়ে অধিক হয়, তবে সকলেই তৃতীয় অংশের শরিক হবে, কৃত ওয়াসিয়াত কিংবা ঋণ পরিশোধের পরে, যদি কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়, এ হলো আল্লাহর বিধান, আল্লাহ সর্বজ্ঞ সহনশীল।”

মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইন, ১৯৬১ সালের উত্তরাধিকার আইনে মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনা হয়। মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইন, ১৯৬১, বাংলাদেশে এখনো হুবহু চালু ও কার্যকর আছে।

উক্ত অধ্যাদেশের ধারা-৪-এ পৌত্র/দৌহিত্রের উত্তরাধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে,

“যার সম্পত্তির উত্তরাধিকার সূত্রে বন্টিত হবে তার পূর্বে তার কোন পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বন্টনের সময় উক্তপুত্র বা কন্যার কোন সন্তানাদি থাকলে তারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ঐ অংশ পাবে যা তাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পেত।”

ক্রয় সূত্রে/মূলে:

নিবন্ধন/রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ অনুসারে ধারা ২৩ এর বিধান মতে ক্রয় কৃত সম্পত্তির দলিল নিবন্ধন করতে হবে, যার মাধ্যমে মালিকানা পেতে পারে।

নিবন্ধন /রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮  ধারা- ২৩:

“দলিল দাখিলকরণের সময়:- ধারা ২৪, ২৫ এবং ২৬ এর বিধানাবলী সাপেক্ষে, উইল ব্যতিত অন্য কোন দলিল যদি উহা সম্পাদনের তারিখ হইতে তিন মাসের মধ্যে উপযুক্ত কর্মকর্তার নিকট রেজিস্ট্রিশনের উদ্দেশ্যে দাখিল করা না হয়, তাহা হইলে উহা রেজিস্ট্রিশনের জন্য গৃহীত হইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, ডিক্রি বা আদেশের নকল, ডিক্রি বা আদেশ দানের তারিখ হইতে তিন মাসের মধ্যে, বা যে ক্ষেত্রে  উহা আপিলযোগ্য, সেই ক্ষেত্রে আপিল চূড়ান্ত হওয়ার তারিখ হইতে তিন মাসের মধ্যে দাখিল করা যাইবে। ”

রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ ধারা-২৪

“কতিপয় ব্যক্তির কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সম্পাদিত দলিল:- “যে ক্ষেত্রে কতিপয় ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কোন দলিল সম্পাদন করেন, সেই ক্ষেত্রে প্রত্যেক সম্পাদনের তারিখ হইতে চার মাসের মধ্যে এইরূপ দলিল নিবন্ধন ও পুনঃনিবন্ধনের জন্য দাখিল করা যাইবে”।

রেজিস্ট্রেশন  আইন, ১৯০৮ ধারা-২৫

যে ক্ষেত্রে দাখিল করণে বিলম্ব অপরিহার্য সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা:-

“(১) যদি বাংলাদেশের সম্পাদিত কোন দলিল, বা প্রদত্ত ডিক্রি বা আদেশের নকল কোন জরুরি আবশ্যকতা বা অপরিহার্য দুর্ঘটনাবশত দাখিল করিবার জন্য ইতিপূর্বে বর্ণিত নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও নিবন্ধনের জন্য দাখিল করা না  যায় এবং যে ক্ষেত্রে দাখিল করণে বিলম্ব চার মাস অতিক্রম না করে, সেই ক্ষেত্রে রেজিস্টার এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন যে, উপযুক্ত নিবন্ধন ফিসের অনূর্ধ্ব ১০ গুন পরিমাণ জরিমানা প্রদান করা হইলে, উক্ত দলিল নিবন্ধনের জন্য গ্রহণ করা যাইবে।

(২) এরূপ নির্দেশের জন্য যেকোনো আবেদন সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট দাখিল করা যাইবে, এবং সাব-রেজিস্ট্রার উক্ত আবেদন তিনি যে রেজিস্ট্রারের অধস্তন তাহার নিকট অবিলম্বে প্রেরণ/ অগ্রায়ন করিবেন”।

রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ ধারা-২৬

বাংলাদেশের বাহিরে সম্পাদিত দলিল পত্র:- “বাংলাদেশের বাহিরে সকল বা যেকোনো পক্ষ কর্তৃক সম্পাদিত বলিয়া দাবিকৃত কোন দলিল দাখিলকরণের জন্য  ইতিপূর্বে নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যেক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য দাখিল করা না হয়, সেই ক্ষেত্রে নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে:-

(ক)  দলিলটি উত্তরূপ সম্পাদিত এবং

(খ) ইহা বাংলাদেশ পৌছাইবার পর চার মাস সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য দাখিল করা হইয়াছে। তাহা হইলে তিনি, উপযুক্ত ফি পরিশোধ সাপেক্ষে উক্ত দলিল নিবন্ধনের জন্য গ্রহণ করিতে পারিবেন”।

দান মূলে/ সূত্রে:

সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তি দাতা কোন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং তাহা গ্রহীতা বা তাহার পক্ষে গ্রহণ করলে তাকে দান বলা হয়।

দান বিভিন্নভাবে  হতে পারে এবং দানের প্রকারভেদ

 

    • দান পত্র/হেবা/শর্ত-উল-এওয়াজ/Gift/Declaration of Heba/Gift of Heba;

    •  হেবা-বিল এওয়াজ;

    • ওয়াসিয়ত নামা ইত্যাদি।

হেবা কাকে বলে :

কোন ইসলামধর্মাবলম্বী/মুসলিম/মুসলমান/ব্যক্তি অন্য কোন ইসলামধর্মাবলম্বী/মুসলিম/মুসলমানকে ব্যক্তি কোন বিনিময় ব্যতিরেকে কোন স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করলে তাকে হেবা বলে। হেবা সম্পন্ন করার জন্য তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ –

 

    • হেবার প্রস্তাব;

    • গ্রহীতার সম্মতি; এবং

    • দখল হস্তান্তর।

হেবার প্রকার ভেদ:-

(১) দান পত্র/হেবা/শর্ত-উল-এওয়াজ/Gift/Declaration of Heba/Gift of Heba; এবং

(২) হেবা-বিল-এওয়াজ।

হেবা বা শর্ত- উল-এওয়াজ/দান পত্র/Gift of Heba/Declaration of Heba:-

কোন একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী/মুসলিম/মুসলমান অন্য কোন একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী/মুসলিম/মুসলমানকে  কোন প্রকার বিনিময় প্রদানের শর্ত মুক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করাকে হেবা বা শর্ত-উল- এওয়াজ বলে। হেবা বা শর্ত- উল- এওয়াজ মূলত দান। এটা সম্পাদন হওয়ার জন্য দখল হস্তান্তর আবশ্য। বিনিময় প্রদানের পূর্বে হেবা বা শর্ত- উল- এওয়াজ বাতিলও করা যায়।

হেবার শর্তসমূহ কি কি?

কোন হেবা আইনানুগ হতে হলে অবশ্যই সেখানে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে, সেগুলো হলো  :-

(১) দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা বা প্রস্তাব;

(২) দানগ্রহীতা কর্তৃক উহা গ্রহণ; এবং

(৩) দাতা কর্তৃক দান গ্রহীতা কে দানের বিষয়বস্তুর দখল প্রদান করতে হব।

এই শর্ত সমূহ যদি পালন করা হয়, তাহলে হেবাটি আইনানুগ ভাবে সিদ্ধ হবে। 

হেবা বা দান যে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে করা যাবে:-

রেজিষ্ট্রেশন আইন,-১৯০৮ এর ধারা ৭৮এ(বি) নং অনুসারে হেবার ঘোষণা দলিলের মাধ্যমে ইসলামধর্মাবলম্বী/মুসলিমরা যে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে হেবা বা দান করতে পারে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

 

    • সহোদর ভাই-বোন একে অপরকে;

    • পিতা/মাতা-ছেলে/মেয়ে একে অপরকে;

    • স্বামী/স্ত্রী একে অপরকে;

    • দাদা/দাদী-নাতী/নাতনী একে অপরকে; এবং

    • নানা/নানী-নাতী/নাতনী একে অপরকে ।

হেবা-বিল-এওয়াজ:

হেবা- বিল-এওয়াজ হলো সম্পত্তির মূল্যের পরিশধের বিনিময়ে হেবা, হেবা বা দানের ক্ষেত্রে  এটি একটি বিশেষ ব্যতিক্রম বটে। এই হেবাকে বৈধ করতে হলে ২ (দুটি) শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে।

          (১) দান গ্রহীতা কর্তৃক হেবা-বিল-এওয়াজ এর বিনিময় মূল্য প্রকৃত অর্থেয় দিতে হবে; এবং

          (২) দাতার মালিকানা পরিত্যাগকরত দান করার আন্তরিক অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।

অছিয়তনামা বা উইল:

অছিয়তনামা:

অছিয়ত হলো ভবিষ্যৎ দান, কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বা সম্পত্তির মুনাফা কি ভাবে বিলি-বন্টন করা হবে তা তাহার মৃত্যুর পূর্বে লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারণ করে যাওয়ার আইন সম্মত ঘোষণাই হলো অছিয়ত। এটা এক ধরনের উইল।

উইল /Will:

উইল(Will) এক ধরনের দানপত্র। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি উইলের মাধ্যমে আত্মীয়দের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বা পছন্দ তাকে দান করে যেতে পারেন।

অছিয়তনামার বৈশিষ্ট্য:

(১) উইল কে মুসলিম শরীয়ত আইনে অছিয়ত বলে;

(২) অছিয়তনামা অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর কার্যকরী হয়;

(৩) এক্সিকিউটর মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির যথাযথভাবে বন্টন করার পদক্ষেপ নেয়;

(৪) অছিয়তনামা রেজিষ্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। তবে অছিয়ত কারীর মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট জেলা জজ আদালতে  দাখিল করে প্রবেট করাতে হয়; এবং

(৫) মুসলিম শরীয়ত আইনে ১/৩ (এক-তৃতীয়াংশের) বেশি  সম্পত্তি অছিয়ত করা যায় না।

অছিয়তের শর্ত:

(১) সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ যেকোনো সাবালক ব্যক্তি অছিয়ত করতে পারেন;

(২) অছিয়ত দাতার মৃত্যুর পর কার্যকর হবে;

(৩) অছিয়ত যে কেউ গ্রহণ করতে পারেন;

(৪) অছিয়ত কারীর ইচ্ছা সুস্পষ্ট ও সঠিক ভাবে নির্ণয়যোগ্য হতে হবে; এবং

(৫) অছিয়ত কারীর সম্পূর্ণ/সকল সম্পত্তির ১/৩(এক- তৃতীয়াংশের) বেশি প্রদান করা যাবে না।

অছিয়তের উদ্দেশ্য :

(ক) ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ; এবং

(খ) ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ।

ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ২ প্রকার:-

(১) ওয়ারিশের বরাবর অছিয়ত; এবং

(২) ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তির বরাবর অছিয়ত।

2 thoughts on “আইনগতভাবে কোন ব্যক্তি সম্পত্তির মালিকানা কি কি উপায়ে পেতে পারে (19.01.2024)”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *